যিলহজ্ব
মাসের ফযীলত
আরবী
বর্ষপঞ্জীর মধ্যে জিলহজ্ব মাস দ্বাদশতম বা সর্বশেষ মাস। এ মাসের ৯ তারিখ বিশ্বের
মুসলিম সম্প্রদায় কাবাঘর তওয়াফ ও অন্যান্য আনুষ্ঠানিক কার্যাদি সমাপন উদ্দেশ্যে
মক্কা নগরে একত্র হন। এ পরিপ্রেক্ষিতে এ মাসের ফযীলত এত অধিক যে, সংক্ষেপে বর্ণনা
করলেও পুস্তিকার কলেবর বৃদ্ধির আশংকায় বিরত থাকতে বাধ্য হলাম। তা সত্বেও যে সব
ফযীলত ই ইবাদতের কথা না জানলেই নয়, কেবলমাত্র সে সব ফযীলত ও ইবাদতের বর্ণনা সংক্ষেপে
পাঠক-পাঠিকার খেদমতে পেশ করলাম। এ মাসে আল্লাহ্ পাক মর্যাদাপূর্ণ তিনটি দিন
নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন। তা হলো-(ক) ইয়াওমে তারাবিয়াহ্ (খ) ইয়াওমুন নহর এবং (গ)
ইয়াওমে আরাফা। এতদ্ব্যতীত আরও ৩টি দিন রয়েছে যাকে আইয়্যামে তাশরীক বলা হয়। এ তিনটি
দিনও অত্যন্ত ফযীলত ও বরকতপূর্ণ। হজ্ব আদায়ের পরবর্তী তিন দিনকে আইয়্যামে তাশরীক
বলা হয়।
যিলহজ্ব
মাসের প্রথম দশ দিনের ফযীলত
যিলহজ্ব
মাসের প্রথম দশ দিন সম্মানকারীকে আল্লাহ্ তাআলা যে দশটি বুজুর্গী দান করেন,
সেগুলো নিম্নে বর্ণনা করা গেলঃ-
১।
বয়স বৃদ্ধি করেন ৬। অন্ধকারে
আলো দান করেন
২।
ধন-দৌলত দান করেন ৭। পূন্যের পাল্লা
ভারি করেন
৩।
পাপসমূহ ক্ষমা করেন ৮। দোযখ থেকে
মুক্তি দেন
৪।
পূণ্য দ্বিগুণ করেন ৯। বেহেশতের
দ্বার উন্মুক্ত করেন এবং
৫।
মৃত্যু কষ্ট লাঘব করেন ১০। পরিবারের
দেখা শোনা করেন
হযরত
আদম (আঃ) কে বেহেশ্ত থেকে সিংহল দ্বীপের একটি পর্বতের চূড়ায় নিক্ষেপ করা হলো।
তিনি সেখানে থেকেই তিন বত্সর যাবত (কোন কোন রেওয়ায়েতে তিনশত বত্সর) কান্নাকাটি
করতে থাকেন। ঐ পর্বতের চূড়ার নাম রাখা হয়েছে এডাম পীক বা আদম চূড়া। সেখানে তাঁর
অশ্রুতে একটি ঝরণার সৃষ্টি হয় আর তাঁর আশেপাশের সবকিছু সুগন্ধি হয়ে যায়।
অতঃপর
করুণাময় আল্লাহ্ তাআলা তাঁর নিকট জিব্রাঈল (আঃ) কে পাঠালেন। তিনি সেখানে পৌছে
আদম (আঃ) কে বললেনঃ হে আদম (আঃ)! আপনি এখন
বায়তুল্লাহ শরীফে যান এবং সেখানে আশুরার দিনের অপেক্ষায় থাকুন। আশুরার দিন তওবা
করে আল্লাহ্ তাআলার দরবারে ক্ষমা প্রার্থনা করলে আল্লাহ্ আপনাকে ক্ষমা করে দিতে
পারেন।
এ
শুভ সংবাদ শ্রবণ করে আদম (আঃ) তখন তখনই কাবা শরীফের দিকে যাত্রা করে সেখানে পৌঁছে
আশুরার দিনের আগমনের অপেক্ষায় থাকেন। আশুরার দিন তিনি কেদে কেটে এই বলে প্রার্থণা
করলেন-
ربنا
ظلمنا ا نفسنا وان لم تغفرلنا وترحمنا لنكونن من الخاسرين-
উচ্চারণঃ
রব্বানা জ্বলামনা আনফুছানা ওয়া ইল্লাম তাগ্ ফিরলানা ওয়া তার হামনা লানা কু-নান্না
মিনাল খছিরীন। (সূরা আ'রাফ, আয়াত-২৩)।
অপার
করুণাময় আল্লাহ্ তাআলা ওহী পাঠালেন, "হে আদম (আঃ)! তোমায় ক্ষমা করে দিলাম এ
দশ দিনের বরকতে।
ভাই
মো'মীনগণ! আমাদেরও কি উচিত নয় আদম (আঃ)-এর মত এ দশ দিন একটু কষ্ট করে হলেও জীবনের
গোনাহ্সমূহ ক্ষমা করিয়ে নেয়া।
********************
কোরবানী করার
নিয়ম
কোন প্রাণী কোরবানী বা জবেহ্ করতে হলে প্রথমে এর মাথাকে
দক্ষিণ দিকে পশ্চিম মুখী করে রাখবে এবং কোরবানীর প্রাণী হলে নিম্নোক্ত দোয়া পাঠ
করবে-
উচ্চারণ : ইন্নী ওয়াজ্জাহ্তু ওয়াজ্ হিয়া লিল্লাজি
ফাতারাস সামাওয়াতী ওয়াল আরদা হানীফাও ওয়ামা আনা মিনাল মুশরিকীন, ইন্না ছালাতি ওয়া
নুসুকী ওয়া মাহ্ইয়ায়া ওয়ামামাতি লিল্লাহি রাব্বিল আলামীন। আল্লাহুম্মা মিনকা ওয়া
লাকা। এর পর
বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার বলে জবেহ্ করতে হবে এর পর
নিম্নোক্ত দোয়া পাঠ করতে হবে।
আল্লাহুম্মা তাকাব্বাল্হু মিন্নী কামা তাক্বাব্বাল্তা
মিন হাবীবিকা মুহাম্মাদিন ওয়া খলীলিকা ইবরহীমা আলাইহিস সালাতু ওয়াস্সালাম।
কুরবানী
সম্পর্কীয় কতিপয় জ্ঞাতব্য
১। দশই জিলহ্জ ঈদের নামাযের পর থেকে (১২) বারই জিলহজ্জ
সুর্যাস্ত পর্যন্ত কুরবানী করা যায়। তবে প্রথম দিন কুরবানী করা উত্তম। ঈদের
নামাযের আগে কুরবানী করলে কুরবানী হবে না এবং রাতের বেলায়ও কুরবানী করা মাকরুহ।
২। কোরবানীর পশু ভেড়া, খাসী, দুম্বা বা এ জাতীয় অন্য কোন
প্রাণী হলে এটা একজনের নামেই কুরবানী করা যাবে। আর যদি গরু, উট বা মহিষ হয় তবে সাত
জনের নামে কুরবানী করতে পারবে তবে শর্ত হল সকলের অংশই সমান হতে হবে যদি কারও কম
বেশী হয় তবে কুরবানী জায়েজ হবে না।
৩। শরীকী কুরবানীর ক্ষেত্রে সকলের নিয়ত বিশুদ্ধ হতে হবে
এবং সকলের হালাল পয়সা হতে হবে। যদি কোন একজন হারাম পয়সা বা গোশত ভক্ষণের নিয়তে
কুরবানী করে তবে কারোরই কুরবানী হবে না।
৪। কুরবানীর সাথে আকীকাও করা যেতে পারে। এতে কোন অসুবিধা
হবে না।
৫। শরীক কুরবানীর ক্ষেত্রে পাল্লা দিয়ে মেপে গোশত বন্টন
করতে হবে। যদি কারো কম বেশী হয় তবে কুরবানী বৈধ হবে না।
৬। কুরবানীর গোশত তিন ভাগে ভাগ করে এক ভাগ নিজের জন্য,
এক ভাগ আত্মীয় স্বজনের জন্য ও এক ভাগ ফকীর মিস্কিনের জন্য রাখাটা মুস্তাহাব। যদি
কেউ পূর্ণ গোশতই নিজের জন্য রেখে দেয় তবে তা যায়েজ। কিন্তু এটা অনুচিত।
৭। কোরবানীর পশু দিয়ে চাষ বা অন্য কোন কাজ করা মাকরুহ।
৮। কোরবানীর চামড়া ইচ্ছে করলে শুকিয়ে নিজে ব্যবহার করতে
পারে। তবে গরীব দু:খীদের মাঝে বিতরণ করে দেয়া উত্তম। এ ক্ষেত্রে বর্তমান বাংলাদেশে
প্রচলিত বেসরকারী বা ক্বওমী মাদ্রাসা সমূহের লিল্লাহ বোডিংয়ে কুরবানীর চামড়া বা
তার মূল্য দান করে দ্বিগুন ছওয়াব পাওয়া যায়। এক: দানের ছওযাব, দুই: ধর্মীয় শিক্ষা
প্রতিষ্ঠানে সাহায্য সহযোগিতা করার ছওয়াব।
৯। কোরবানীর পশু যদি বকরী, ভেড়া বা দুম্বা হয় তবে কম
পক্ষে এক বছরের হতে হবে, যদি গরু বা মহিষ হয় তবে অন্তত:পক্ষে দু বছরের হতে হবে। আর
যদি উট হয় তবে কম পক্ষে পাঁচ বছরের হতে হবে।
১০। কোরবানীর পশু যদি অন্ধ বা লেংড়া বা শিং গোড়া থেকে
ভাঙ্গা থাকে তবে এটা দ্বারা কোরবানী হবে না। তবে যদি কোন পশুর কান ছোট হয় বা দাতের
অর্ধেকের বেশী থাকে তবে এটা দ্বারা কোরবানী যায়েজ হবে।
আক্বীকার
বিধান
আক্বীকা করা সুন্নত। মুসলিম সন্তান ভূমিষ্ট হওয়ার পর তার
প্রতি প্রথম কর্তব্য হলো: নবজাতকের এক কানে আযান ও অপর কানে ইকামত শুনিয়ে দেয়া। ছেলে হলে তার ডান কানে আযান ও বাম কানে ইকামত আর
মেয়ে হলে তার বাম কানে আযান আর ডান কানে ইকামত দিবে। এরপর সপ্তম দিনে নবজাতকের নাম
করন ও আকীকা দেয়া সুন্নত। এতে করে সন্তান যাবতীয় বিপদ আপদ থেকে মাহফুজ থাকে। আকীকার
ক্ষেত্রে ছেলে হলে দুটি বকরী আকীকা করতে হয়। তবে যদি তার পক্ষে দুটি বকরী, আকীকা
করা সম্ভব না হয় তবে একটি দিলেও তা যথেষ্ট হবে। যদি কার সামর্থ না থাকে তবে আকীকা
না কোরলেও কোন অসুবিধা নেই। কোরবানীর গরুর সাথে আকীকা করা যায়, তবে ছেলের আকীকার
জন্যে দু ভাগ আর মেয়ের আকীকার জন্যে এক ভাগ দিতে হবে। আকীকার দোয়া নিন্মে দেয়া হল।
উচ্চারন: আল্লাহুমা হাজিহী আক্বীক্বাতুবনী দামুহা
বিদামীহী ওয়ালাহ্মুহা, বিলাহিমহী ওয়া আজমুহা বিআজমিহী ওয়া জিলদুহা বিজিলদিহি ওয়া
শা'রুহা বিশা'রিহি ইন্নী ওয়াজজাহ্তু ওয়াজহিয়া লিল্লাজী ফাতারাস সামাওয়াতি ওয়াল
আরদা হানীফা ওয়ামা আনা মিনাল মুশরিকীন। ইন্না সালাতী ওয়ানুসুকী ওয়ামাহ্ইয়া ইয়া ওয়ামামা-তী
লিল্লাহি রাব্বিল আলামিন, লা-শারীকালাহু ওয়াবিজালিকা উমিরতু ওয়া আনা মিনাল
মুসলিমীন। আল্লাহুম্মা মিন্কা ওয়ালাকা বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার।
জবেহের সুন্নত
ও নিয়ত
জবেহের সুন্নত চারটি-
১) পবিত্র হালাতে জবেহ্ করা ২) ছুরি ভালভাবে শান দিয়ে
নেয়া ৩) জবেহ কারী ও সাহায্য কারীর কিবলা মুখী হয়ে জবেহ করা।৪) যবেহের নিয়ত করা।
যবেহের নিয়ত
উচ্চারন: নাওয়াতু আন আজবাহা হাজাল হাইওয়ানা বিহাইছু
ইয়াখরুজু আনহুদ্দামুলমাসফুহু ওয়াতাকুনু লাহমুহু হালালান লি-জামীয়িল মু'মিনীনা ওয়াল
মুমিনা-তি, বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার।
বি: দ্র:-যবেহের সময় এভাবে নিয়ত করা জরুরি নয়। শুধু
বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার বলে যবেহ করলেই যবেহ হয়ে যাবে।
No comments:
Post a Comment